Lecturer, Mathematics, Matibhanga Degree College, Nazirpur, Pirojpur.

This is my Personal Blog. Stay with me

Education/Entrepreneur

উদ্যোক্তা হবার নেশায় পড়াশোনা ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা!

read more

Business (Evaly)

ই-ভ্যালির লোভনীয় অফার, ক্রেতাদের লোভ, ভুল অর্ডার ও অভিযোগ

read more

Opinion

নব দম্পতির স্বপ্নছোঁয়ার ভ্রমণ ও ধর্ষণ

read more

Tuesday, September 29, 2020

নব দম্পতির স্বপ্নছোঁয়ার ভ্রমণ ও ধর্ষণ

 


পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীন ও অন্যান্য লেখক নকশী কাঁথা প্রসঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্ধৃতি দিয়েছেন। সবাই একটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে লিখেছেন, নকশী কাঁথার প্রতিটি সুচের ফোঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে একেকটি পরিবারের কাহিনী, তাদের পরিবেশ ও জীবনগাঁথা। কেউ কেউ লিখেছেন, এই কাঁথার প্রতিটি ফোঁড়ে থাকে পরিবারের নতুন সদস্যদের প্রতি শুভকামনা, স্নেহ ও ভালোবাসার পরশ। নকশী কাঁথার স্মৃতি ও স্বপ্ন কাহিনীর মতোই, সদ্য বিবাহিত যেকোনো দম্পতির প্রতিটি সেকেন্ডই একেকটি স্বপ্নের সিঁড়ি। তারা একে অপরের চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যায় আগামীর পথ চলায়। স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে প্রতিটি মুহূর্তে। তারা ভ্রমণ করতে পছন্দ করে, একে অপরে মনের কথাগুলো একান্তে বলতে চায়, শুনতে চায়। সেদিনও একটি নব দম্পতি একে অপরের হাতে হাত রেখে সিলেটে এমসি কলেজের কাছে আনন্দ ভ্রমণে যায় আফসুস! সেই যাত্রাপথে তাদের স্বপ্নকে শেষ করে দেয় কিছু পাষণ্ড। এক নিমেষেই কলঙ্কের কালি মেখে দেয় নতুন শাড়ীর আঁচলে। স্বামী হয়তো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রত্যাশা করেছিলেন তার ভালোবাসার মানুষটির কোনও ক্ষতি হবেনা কিন্তু সেখানে কোন বিবেকবান চরিত্র নেইতাকে বেঁধে রেখেই তার প্রাণের প্রিয় মানুষটিকে গণধর্ষণ করলো এমসি কলেজের ৬/৭ জন পাষণ্ড আহ! কী লোমহর্ষক ৬/৭ টি ছেলের মধ্যে একটি ছেলেও কি বিবেকবান হতে পারতো না? তাহলেও হয়তো মেয়েটাকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যেত। ঐ কাপুরুষদের জন্য দম্পতির নতুন জীবনের স্বপ্নছোঁয়ার যাত্রায় নেমে এলো কালো ছায়া।

 

১৯৭১ সালে বাংলাদেশি নারীদের সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছিল রাজাকারদের নিয়ে। তখনকার সময়ে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচলেও রাজাকারদের কারণে বাঁচতে পারতো না। ঠিক যেন আমরা একাত্তরে ফিরে গেছি। স্বামী-স্ত্রী একসাথে রাস্তায় চলাচল করলেও নিরাপদ নয়। এরাতো রাজাকারদেরও হার মানিয়েছে। তখন নাহয় বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি পায়নি, কিন্তু বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশে এসব হচ্ছেটা কী! করোনা ভাইরাসের এই মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশে গত ৩ মাসে একের পর এক ধর্ষণের খবরে উদ্বিগ্ন প্রতিটি পরিবার। ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ নিরাপদ থাকতে পারছে না। লাগাম টেনে ধরার কেউ নাই! সমাজের অবক্ষয় দিন দিন এভাবে বাড়তেই থাকবে? দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচারের গতি বাড়ানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই যতই চাপ থাকুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের এমসি কলেজসহ সকল ধর্ষণের অভিযোগগুলোর দ্রুত তদন্ত করে বিচার করা উচিত।

 

ইদানীং ধর্ষণসহ আরও কিছু অপরাধের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের সংগঠন ছাত্রলীগের বেশ কিছু সদস্যদের বিরুদ্ধে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বারবার, অস্বস্তিতে পরতে হচ্ছে সিনিয়র নেতাদের। আমার মতে, ছাত্রলীগের সকল কমিটি আপাতত স্থগিত রাখা উচিত। তারপর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে একেকজন করে শপথ পাঠ করিয়ে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এধরণের অন্যায় করলে দায়ভার তার দল নিতে পারে। বর্তমান সময়ে ছাত্রলীগ কি তার কোন কমিটি বা ইউনিটকে অপরাধমুক্ত ঘোষণা করতে পারবে? যদিও ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য দাবী করেছেন, নারীর প্রতি খারাপ চোখে তাকানোর মতো কর্মী ছাত্রলীগে নেই। আমারতো মনে হচ্ছে, প্রত্যেকটি কমিটিতেই বিতর্কিত বা অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত কর্মী রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নিজের আদর্শে গড়া সংগঠন এভাবে বিতর্কিতভাবে পরিচালিত হবে, এটা খুবই দুঃখজনক। যাদের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে দেশের উন্নয়ন কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার কথা, তারাই যদি অপরাধে লিপ্ত থাকে, সেখানে সীমাহীন দুঃখপ্রকাশ ছাড়া আর কী বলার থাকে! আমি এখনো বিশ্বাস রাখতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ছাত্রলীগ তার আদর্শিক ঐতিহ্য আবার ফিরে পাবে।

 

পরিশেষে, সকলের ঐ দম্পতির পাশে থাকা উচিত। তারা যাতে সব আঘাত ভুলে নতুনকরে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে পারে সেই সাহস দেয়া উচিত। এটি একটি দুর্ঘটনা, যেখানে তাদের কোন হাত ছিলনাআঘাত থেকে শক্তি সঞ্চয় করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মনোবল দৃঢ় রেখে এগিয়ে চলা উচিত। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, এই নব দম্পতির বন্ধন যেন আরও সুদৃঢ় হয়। 

 

 লিখেছেনঃ মোঃ আসাদুজ্জামান, প্রভাষক, মাটিভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ, নাজিরপুর, পিরোজপুর।

Share:

Wednesday, September 9, 2020

ই-ভ্যালির লোভনীয় অফার, ক্রেতাদের লোভ, ভুল অর্ডার ও অভিযোগ

 


ই-ভ্যালি নিয়ে লিখছি, সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ায় অন্যতম আলোচিত বিষয় হচ্ছে ই-ভ্যালির ভারসাম্যহীন বিজনেস পলিসি নিয়ে। ই-ভ্যালি কীভাবে বিজনেস করে, বিজনেস পলিসি ঠিক নাকি ভুল সেটা নিয়েও ইতোমধ্যে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ই-ভ্যালি থেকে যারা সরাসরি পণ্য কিনেছে তারা অধিকাংশই ই-ভ্যালিকে সাপোর্ট করে যাচ্ছে। তবে চলমান তদন্ত কার্যক্রমকে সবাই স্বাগত জানাচ্ছে। অনেকেই ই-ভ্যালি থেকে পণ্য কিনে নিজেকে লাভবান মনে করছে, সবাইযে লাভে আছে এমনটা নয়, ভবিষ্যতে সবাই কেমন থাকবে সেটাই বড়। ধারণা করছি, এবারের তদন্তে ই-ভ্যালির কোনও ত্রুটির জন্য শাস্তি হলেও হতে পারে। কারণ, শুরু থেকেই তাদের বিজনেস পলিসি অনেকের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। তাছাড়া একটি নতুন প্রতিষ্ঠান ছোটখাটো ভুল করতেই পারে।

এখন দেখবার বিষয়, ই-ভ্যালি অনৈতিক কিংবা অসাধু উপায়ের কারণে শাস্তি পেলে শাস্তিটা কতটুকু হয়, গ্রাহকদের ভোগান্তি কতটুকু হবে, ই-ভ্যালি তার বিজনেসে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে কিনা সেটাও গ্রাহকদের ভাবাচ্ছে। যদিও ই-ভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল তার ফেসবুক লাইভে (২৮ আগস্ট ২০২০, রাত ১১টা) বলেছেন, ই-ভ্যালির কার্যক্রম চলবে। সাময়িকভাবে ক্যাশ অন ডেলিভারি (COD) সিস্টেমে কেনা-বেচা চলবে (পণ্য হাতে পাবার পরে অর্থ পরিশোধ করতে হবে), এক্ষেত্রে কেউ চাইলে ইনভয়েসভেদে ই-ভ্যালির ব্যালেন্স থেকে ক্যাশব্যাকের ৩০% টাকা ব্যয় করতে পারবে। যেহেতু ব্যাংক একাউন্ট ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে, ক্যাশ অন ডেলিভারি ছাড়া উপায়ও নেই। অবশ্য সিইও এই সিস্টেমকে সাময়িক সময়ের জন্য বলেছেন। তিনি অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ বৈধ বলে দাবি করেন।

ই-ভ্যালির কয়েকটি মারাত্মক ভুল যা নিজেদের ক্ষতির কারণ, একটি ভুল ছিল অফারের পণ্য একজনকে যতখুশি তত কিনতে দেয়া। এর ফলে একদল ব্যবসায়ী রিসেলার হিসেবে ই-ভ্যালিতে প্রবেশ করে বাংলাদেশের পুরো মার্কেট প্লেসের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। স্বাভাবিকভাবেই ই-ভ্যালি বৈধ পথে থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রভাব খাটিয়ে বিজনেস পলিসি বের করতে চাইবে, বা মার্কেটে তারাও টিকে থাকতে চাইবে। বর্তমানে ই-ভ্যালি নিয়ে যত ঝামেলা হচ্ছে, সম্ভবত এটাই অন্যতম কারণ। ই-ভ্যালি এই ধাক্কা সামলাতে পারলে ভবিষ্যতে পূর্ণ আস্থা ফিরে পাবে, আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাবে। সেই হিসেবে, সুষ্ঠু তদন্ত সবার জন্যই পজিটিভ বার্তা দিবে। ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে অবৈধ পলিসিতে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে, তাতেও তাদের প্রতারণা থেকে অন্ততপক্ষে কিছু গ্রাহক রক্ষা পাবে।

ই-ভ্যালি তার প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে কেনাকাটার ক্ষেত্রে বারবার তাদের টার্মস এন্ড কন্ডিশন পরিবর্তন করেছে। এর জন্য নতুন গ্রাহকরা টার্মস এন্ড কন্ডিশন না বুঝেই হুটহাট অর্ডার করে ফেলছে। এর ফলে অর্ডার ক্যান্সেল হয়েছে, রিফান্ড প্রসেসের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তখনই বিভিন্ন গ্রুপে নেতিবাচক পোস্ট দেয়া শুরু হয়। যদিও এর বাইরেও ধীর গতির ডেলিভারিসহ কিছু যৌক্তিক অভিযোগতো আছেই।

ই-ভ্যালির নিজস্ব ফেসবুক গ্রুপ আছে। সেখানে তেমন কোন নেগেটিভ রিভিউ এপ্রুভ হয়না। কাস্টমার কেয়ারের অদক্ষতা ও নিজ গ্রুপে নেগেটিভ রিভিউ এপ্রুভ না হবার কারণে ঐসব গ্রাহকরা বাধ্য হয়ে অন্যসব গ্রুপে তাদের সমস্যার কথা শেয়ার করে। এতেই ই-ভ্যালির ক্ষতিটা আরও বেশি হয়। বিভিন্ন সময়ে ই-ভ্যালির সিইও-কে অন্যসব গ্রুপে শেয়ারকৃত নেগেটিভ রিভিউয়ের কমেন্টে রিপ্লে করতে দেখা যায়, অনেকসময় সাথে সাথে ইস্যুর সমাধান করে দেন। অথচ নিজ গ্রুপে রেখেই সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। তাহলে অন্যরা জানতে পারত না।

এবার বলি বিভিন্ন অফারে কিছু গ্রাহকদের ভুল কেনাকাটা ও লোভ নিয়ে- প্রতিটি সাইক্লোন, আর্থকোয়াক, থান্ডারস্ট্রোম অফারে ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশন থাকতো (কখনো ক্যাশব্যাক ব্যালেন্স, কখনো নগদ, কখনো উভয়, কখনো গিফট কার্ড, কখনো পার্সিয়াল পেমেন্ট সিস্টেমে পেমেন্ট করা ইত্যাদি)। প্রিমিয়াম ডিল, হট ডিল, মেগা ডিল, পোড অফার ইত্যাদির জন্যও ছিল আলাদা শর্ত।

পোড (POD-Payment On Delivery) অফারে ই-ভ্যালি ৭-১০ দিনের গ্যারান্টেড ডেলিভারিতে পণ্য সেল করে, অনেকসময় সাথে ক্যাশব্যাকও দিয়ে থাকে। গ্রাহকরা সেখান থেকে পণ্য কিনলে দেরিতে ডেলিভারির কোন প্রশ্ন তুলতে পারতো না। কিন্তু লোভ করে অন্য অফারের পণ্য কিনবে, যেখানে ১৫০% ক্যাশব্যাক দেয়, আবার ডেলিভারিও চাইবে ৭ দিনে, এটাতো ই-ভ্যালির পলিসিতে নাই। তারা অর্ডার নেয়ার সময়েই বলে দেয় ৭-৪৫ দিনে ডেলিভারি দিবে (৬০ দিনের বেশি হলে কখনো কখনো পণ্যের সাথে নির্দিষ্ট একটা পরিমান জরিমানাও দেয় গ্রাহককে)। রেগুলার শপে কেনাকাটায় ছিল ভিন্ন কন্ডিশন (৬০% ক্যাশব্যাক ব্যালেন্স এবং ৪০% নগদ), চাইলে শুধুমাত্র নগদ টাকায়ও কেনা যেত।

উল্লেখ্য যে, পোড অফারেও একটি আলাদা কন্ডিশন আছে, অর্ডার করে টাকা আনপেইড অবস্থায় রেখে দিতে হয়। ই-ভ্যালি ২/১ দিনের মধ্যে স্টক থাকা সাপেক্ষে ইনভয়েসে মেসেজ দিয়ে নগদ টাকা পে করতে বলে, অন্যথায় প্রোডাক্ট স্টকে না থাকলে অর্ডারটি(আনপেইড) ক্যান্সেল করে দেয়। কনফার্মড অর্ডারটি কাস্টমার টাকা পে করলে প্রোডাক্ট পেতে সর্বোচ্চ ৭-১০ দিন লাগে। কিন্তু এখানেও অনেক কাস্টমার ভুল করে ই-ভ্যালি থেকে কনফার্ম করার আগেই পেমেন্ট করে দেয়। ফলে অর্ডারটি(পেইড) শর্তভঙ্গের কারণে বা পণ্য স্টক আউট ইস্যুতে ক্যান্সেল হয়। বাতিল হওয়া অর্ডারটির টাকা ই-ভ্যালির ব্যালেন্সে যোগ হয়, পরে রিপোর্ট ইস্যু করে বিকাশ বা ব্যাংকে রিফান্ড পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ততক্ষণে ঐ গ্রাহক ই-ভ্যালির বদনাম সব গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে ভুল করলো গ্রাহক, বদনাম হল ই-ভ্যালির।

আরো একটি জটিলতা আছে, কাস্টমার শর্ত না মেনে ভুল করে অর্ডারটি সাবমিট করে পেমেন্ট করে ফেললেও ৩ দিনে ক্যাশব্যাক পেয়ে যাবে। ঐ কাস্টমার হয়তো ক্যাশব্যাকের টাকা দিয়ে অর্ডার কনফার্ম হওয়া বা পণ্য ডেলিভারি পাবার আগেই গ্রোসারি পণ্য কিনে ক্যাশব্যাক খরচ করে ফেললো। এসব ভুলের কারণে যদি কাস্টমারের অর্ডার ক্যান্সেল হয়, তাহলে পুরো টাকা নগদ ক্যাশ দেয়া কি সম্ভব? সেতো ইতোমধ্যে যে টাকায় পণ্যের অর্ডার করেছে তার থেকে বেশি ক্যাশব্যাক পেয়ে খরচ করে ফেলেছে। এখানেই সমস্যাটি আরো বেড়ে যায়, তখন কাস্টমার অভিযোগ দেবার সময়ে কখনো বলেনা যে, তিনি ১০০ টাকা পণ্যের অর্ডারে ১৫০ টাকা ক্যাশব্যাক পেয়ে ঐ ক্যাশব্যাকের টাকা লোকাল এক্সপ্রেস সপ থেকে গ্রোসারি কিনে আগেই খেয়ে ফেলেছেন অথবা কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়েছেন। আবার ঐ ১০০ টাকাও রিফান্ড চাইছেন। এক্ষেত্রে ই-ভ্যালি কি তার জন্য ১৫০ টাকা লস দেবে?

ই-ভ্যালির এত এত অফার আর শর্ত নতুন কাস্টমারদের বিপাকে ফেলে। শর্ত না মানলেই অর্ডার ক্যান্সেল হয়, স্টক আউট সমস্যা, বিভিন্ন সেলার পেমেন্ট সমস্যাতো আছেই। রিফান্ড আবেদন ম্যানুয়ালি প্রসেস হতে সময় লাগে ডেলিভারি পাবার প্রায় সমান সময়, অর্থাৎ ৭-৪৫ দিন বা তার বেশি। কন্ডিশন মেনে অর্ডার পেমেন্ট করলে হয়তো পণ্যটি এতদিনে পেয়ে যেতো, তবুও রিফান্ড পাচ্ছেনা। ই-ভ্যালি চাইলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রিফান্ড ইস্যু অটোমেটেড করতে পারতো। সেক্ষেত্রে নিয়ম করতে পারতো, রিফান্ড নিলে সাথে সাথে ক্যাশব্যাক নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে, পণ্য পাবার আগে বা অর্ডার কনফার্ম হবার আগে ক্যাশব্যাক ব্যবহার করা যাবে না। অবশ্যই স্টক ইস্যু ভেবে অফার দেয়া উচিত।

সবকিছু মিলিয়েই মনে করছি, বড় রকমের ক্যাশব্যাক অফার হচ্ছে নতুন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য ই-ভ্যালির পলিসিগত ফাঁদ। যেহেতু তাদের বিজনেস পলিসি জটিল, সেহেতু তারা চাইলে অফারের সব কন্ডিশন চিত্রায়িত করে বা এনিমেশনের মাধ্যমে সহজ করে গ্রাহকদের বুঝিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু সেটা ই-ভ্যালি করে নাই। হয়তো ই-ভ্যালিও চেয়েছে কাস্টমাররা ভুল করুক, তাদের কাছে আটকে থাকুক। বাংলাদেশের লোকজন এখনো ডিজিটাল মাধ্যমে পিছিয়ে আছে, আর এই ডিজিটাল কেনাবেচায় লোভনীয় অফার প্রচার করে নতুন গ্রাহকদের জন্য এমন ফাঁদ পেতে বিজনেস করবে, এটা আমরা প্রত্যাশা করিনা। আমরা চাই ডিজিটাল প্লাটফর্মে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিতে সুরক্ষিত কেনাকাটা করতে।

সবশেষে, ই-ভ্যালি ও গ্রাহক উভয়েই বেঁচে থাকুক। এখনো দৃঢ়ভাবে আশা রাখতে চাই, অল্প ভুল ত্রুটি থাকলে ই-ভ্যালি শুদ্ধ হয়ে নতুনভাবে পথ চলুক, অভিযোগগুলো মিথ্যে প্রমাণিত হোক। সত্যিই ই-ভ্যালি দেশ সেরা ই-কমার্স হোক।

লেখক: প্রভাষক
মাটিভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ
নাজিরপুর, পিরোজপুর।

 
Source Link: The Daily Campus
Share:

উদ্যোক্তা হবার নেশায় পড়াশোনা ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা!



 
আজকাল ফেসবুক জুড়েই উদ্যোক্তাদের সমাগম। আমি তাদেরকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এই লেখাটি লিখছি না। কিন্তু ভাবনার বিষয় হচ্ছে, যখন দেখছি পড়াশোনা করা মেধাবী শিক্ষার্থীরা উদ্যোক্তা হবার স্বপ্নে পড়াশোনাকে প্রাধান্য দিচ্ছে না। তারা অনেকেই সবসময় ফেসবুকে মার্কেটিং ও নিজের প্রেজেন্টেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু একবারো ভাবছে না, স্বপ্নটি ব্যর্থ হলে, সময় চলে গেলে, পড়াশোনা করার জন্য হারানো সময়টুকু খুঁজে পাবে কিনা। উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পার্থক্য আছে এটা বুঝতে হবে। উদ্যোক্তা হবার চ্যালেঞ্জ অনেক। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগই প্রধান নয়, সাথে টিকে থাকার লড়াই।
 
উদ্যোক্তা হবার ক্ষেত্রে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, বয়স, মেধা, শ্রম, অর্থ, পড়াশোনা, সময় ও লক্ষ্য নিয়ে ভেবেচিন্তে আগানো উচিত। কারো কারো উদ্যোক্তা হবার আগ্রহ জীবনের উন্নতি নাও ঘটাতে পারে। ইদানীং কিছু ফেসবুক গ্রুপ খুলে নারী-পুরুষদের উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে, ট্রেনিং দিচ্ছেন, সফলতার গল্প শোনাচ্ছে। একটি কথা মনে রাখবেন, ৫ লাখ টাকার সেল মানে ৫ লাখ টাকা ব্যবসা না। ওসব গ্রুপে কারো কারো নাম উল্লেখ করে অনেকটা এরকমই প্রচার করে, তিনি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। যারা প্রচার করছে তারা হয়তো তাদের দৃষ্টিতে আপনাকে ঠিকপথেই বৃহৎ স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এতে তাদের লাভও আছে। ট্রেনিং বা ওয়ার্কশপ করিয়ে কিছু টাকা অর্জন করছে। আপনার সিদ্ধান্তটি আপনাকেই নিতে হবে, আপনি কি কম্পিটিশন করে টিকতে পারবেন? পারলে আপনার পরিশ্রম কতটুকু? পড়াশোনার কতটুকু ক্ষতি করছেন? যারা ফুলটাইম বেকার, পড়াশোনা শেষ করেছেন বা সুযোগ আছে তাদের কথা ভিন্ন। যিনি ১ কোটি টাকা সেল দিয়েছেন খোঁজ নিয়ে দেখেন, তিনি ফেসবুককেন্দ্রিক বিজনেস করেনা, বড় বড় সপ বা প্রোজেক্ট আছে। তারা হয়তো আগে থেকেই স্বাবলম্বী। কিন্তু ফেসবুক গ্রুপের এডমিনগণ তাদের মার্কেটিং এর স্বার্থে ঐসব বড় ব্যবসায়ীদের সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় করিয়ে আপনাদেরকে তাদের কোর্সে টানছে। তাদের নিয়ে যত বেশি সভা, সেমিনার, মিটআপ ততই প্রচার। তবে সবাই যে গ্রুপ খুলে বিজনেস করে তা নয়।
 
এমন ঘটনাও শুনতে পাচ্ছি, উদ্যোক্তা গড়ার বড় বড় ফেসবুক গ্রুপের এডমিনগণ কিছু ছেলে-মেয়েদের ব্যক্তিগত জীবনও প্রমোট করছেন, উদ্যোক্তা হবার নাম করে গ্রুপের মাধ্যমে ভাল একটা পজিশনে বিয়ে-সাদী হয়ে কিংবা এভাবে লাইফস্টাইলের পরিবর্তন ঘটিয়ে সব ছেড়ে ঘর-সংসার করছে। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল গ্রুপের মাধ্যমে প্রমোট হওয়া, উদ্যোক্তা হওয়া না। এসবে সম্ভবত সহযোগিতা করেন গ্রুপের কিছু পেইড লোকজনই। 
 
যাইহোক, পৃথিবীতে সকলেই অর্থ, শ্রম, পুঁজি ও কৌশল খাটিয়ে লাভবান হবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। সেটা হোক আর্থিক বা সামাজিক। আপনি যেখানে প্রবেশ করবেন, ভিতরে কি আছে আগে জানার চেষ্টা করুন। ভিতরে পৌঁছে গেলে ওখানে কতটুকু সময় থাকতে পারবেন সেটাও বিবেচনা করবেন। যা লিখেছি, সবই আপনাদের সতর্ক করার লক্ষ্যে, কারো ক্ষতি বা সম্মানহানির জন্য নয়।
 
মোঃ আসাদুজ্জামান
প্রভাষক
মাটিভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ
নাজিরপুর, পিরোজপুর।
 
Share: